সুন্দরবন ৩ মাস বন্ধ থাকার সময় আমাদের কষ্ট হয়। সরকার থেকে জেলে কার্ডের যে চাউল দেয় তাতে আমাদের চলে না। তিন জন মানুষের সংসারে সবকিছু কিনে খেতে হয়। ছোট মেয়েটা এবার এস,এস,সি পরিক্ষা দিয়েছে পাশ করলে কলেজে ভর্তি করতে হবে। টাকার দরকার হবে কনে পাবো আমাদের নিজস্ব কোন জায়গা জমি নেই, সুন্দরবনের মাছ, কাঁকড়া ধরে আমাদের সংসার চলে। যখন বন খোলা থাকে তখন আমরা পাশ পারমিট নিয়ে আমার স্বামীর সাথে আমিও বনে যায়। তাতে যা আয় হয় তাই দিয়ে চলি। বনে ডাকাতের ভয়খুব ফরেস্টাররা টহল দেয় সেই ভরে ভরে আমরা বনে থাকি। আমাদের নিজেদের কোন জায়গা জমি নেই রাস্তার এই ওয়াবদার চরে ঘর বেঁধে থাকি । দুর্যোগ আসলে ঘর ভেঙে যায়। নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে বারান্দায় পানি উঠে বুধবার বিকেলে এভাবে কথাগুলো বলেছিলেন তেঁতুলতলা গ্রামের বনজীবী মো. আলামিন হোসেন গাজীর স্ত্রী মোছাঃ ফাতেমা বেগম।
একই গ্রামের বনজীবী আঃ সালাম বলেন, আমি ২৫ বছর ধরে সুন্দরবনের মাছ, কাঁকড়া ধরে সংসার চালায়। আমার নিজের কোন জায়গা জমি নেই। তিন মাস বনে যেতে না পারায় কষ্টে দিনকাটাতে হয়। বাড়ি বসে থাকতে হয় কোন কাজ পায়নি।
তিনি আরোও বলেন, আমার একটা জেলে কার্ডও নেই। পরিবার নিয়ে এই কয়মাস কি খেয়ে থাকবো, কি করব এসব নিয়ে খুব চিন্তায় আছি।
একই গ্রামের বনজীবী মো. আঃ সাত্তার, রবিউল ও শাহিন শেখ বলেন, আমরা সুন্দরবনের উপর নির্ভশীল, সুন্দরবন ছাড়া আমাদের আয়ের কোন উৎস নেই, নেই কোন ঘের-ভেড়ি, রাস্তা-ঘাট ভালো না সুন্দরবনের মাছ-কাকড়া ধরে আমাদের চলতে হয়। এই বন্ধে কারণে আমাদের খুব দুর্ভোগে দিন যায়, আমাদের কষ্টের কোন শেষ নেই। এই বন্ধের সময় যে চাউল দেয় তাতে আমাদের চলেনা। আমাদের হাট, বাজার করতে হয়। পরিবারের ওষুধ পানি, ছেলে মেয়েদের লেখা পড়ার খরচ আছে। আমরা এসব খরচের টাকা কোথায় পাবো সংসার কিভাবে চলাবো এই নিয়ে আমরা খুব চিন্তায় আছি।
বন বিভাগ সূএে জানা গেছে, ১ জুন থেকে ৩১ আগষ্ট এই ৩ মাস কোনো বনজীবীকে সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতিপত্র (পাস) দেওয়া হবে না। একইভাবে এ সময়ে কোনো পর্যটকেও সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন না। বিশেষ করে বর্ষাকালে সুন্দরবনের ২৫১ প্রজাতির মাছ ডিম ছাড়ে। এই সময় মাছ ধরা বন্ধ রাখলে প্রাকৃতিকভাবে মাছের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের খুলনা রেঞ্জের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম (শাহিদ) বলেন, সুন্দরবনে ১ জনু থেকে ৯২ দিনের জন্য সব ধরনের পর্যটক ও বনজীবীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমাদের বন বিভাগের টহল জোরদার করা হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এএজে